বিদ্রোহী কবিতার আলােকে কবির বিদ্রোহী সত্তার স্বরূপ নির্ধারণ এবং বর্তমান সময়ে কবিতাটির প্রাসঙ্গিকতা যাচাই

Spread the love

বিদ্রোহী কবিতার আলােকে কবির বিদ্রোহী সত্তার স্বরূপ নির্ধারণ এবং বর্তমান সময়ে কবিতাটির প্রাসঙ্গিকতা যাচাই

এইচএসসি-বাংলা-১ম-পত্র-অ্যাসাইনমেন্ট-সমাধান-২০২১

 

 

শ্রেণিঃ দ্বাদশ

বিভাগঃ সকল

বিষয়ঃ বাংলা ১ম পত্র

এ্যাসাইনমেন্ট নং-৩

অ্যাসাইনমেন্ট নম্বরঃ ৩

অ্যাসাইনমেন্টঃ ‘বিদ্রোহী কবিতার আলােকে কবির বিদ্রোহী সত্তার স্বরূপ নির্ধারণ এবং বর্তমান সময়ে কবিতাটির প্রাসঙ্গিকতা যাচাই শিখনফল/ বিষয়বস্তু জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গােত্র, পেশা, ক্ষুদ্র নৃগােষ্ঠী নির্বিশেষে সকল মানুষের প্রতি সমমর্যাদার মনােভাব ব্যক্ত করতে পারবে।

নির্দেশনা (সংকেত/ধাপ/পরিধি):

১. ‘বিদ্রোহী কবিতায় কবি নিজেকে যে যে রূপে উপস্থাপন করেছেন, তা খুঁজে বের করা।

২. কবিতায় যেসব ঐতিহ্য ও পুরাণের ব্যবহার করা হয়েছে, তা উল্লেখ করা।

৩. কবির বিদ্রোহী-সত্তা সমাজের যেসব অসাম্যের বিরুদ্ধে কথা বলে, সেগুলাে চিহ্নিত করা।

৪. বর্তমান সময়ের নানারকম। অসাম্যের প্রেক্ষাপটে ‘বিদ্রোহী কবিতার প্রাসঙ্গিকতা যাচাই।

৫. বানান ও ভাষাশৈলীর ব্যাপারে মনােযােগী থাকা।

এইচএসসি বাংলা ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান ২০২১

 

ভূমিকাঃ

বাংলাদেশের জাতীয় কবি ও সর্বমানবিক মুক্তির প্রবক্তা কাজী নজরুল ইসলামের সবচেয়ে উল্লেখযােগ্য কবিতা বিদ্রোহী। ১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে এই কবিতাটি রচিত হয়েছিল। সমূলক হােক আর অমূলক হােক, বিদ্রোহের কোনাে স্বীকৃত ব্যাকরণ নেই। বিদ্রোহ স্বতঃস্ফুর্ত স্বতােৎসারিত, সর্বগ্রাসী ও সংক্রামক।

বিদ্রোহী কবিতায় কবি নিজেকে যে যে রূপে উপস্থাপন করেছেনঃ

‘বিদ্রোহী কবিতায় নজরুলের বিদ্রোহ চেতনার প্রকাশ ঘটেছে। ভারতীয় এবং পশ্চিম এশীয় পুরাণ ও ইতিহাসের আধার থেকে শক্তি সঞ্চয় করে নজরুল এখানে প্রবল বিদ্রোহ বাণী উচ্চারণ করেছেন। নজরুল বিদ্রোহ করেছেন ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে, শৃঙ্খলপরা আমিত্বের বিরুদ্ধে। এই কবিতা রচনার জন্য নজরুল ‘বিদ্রোহী কবির আখ্যা পেয়েছেন। এখানে নজরুল তার বিদ্রোহকে সঙ্গত কারণেই ‘আমি’ প্রতীকে ব্যঞ্জনাময় করেছেন এবং নিজেকে অজেয় বলে উপলব্ধি করেছেন। তাইতাে’ বিদ্রোহী আত্মশক্তিকে উদ্বোধিত করার লক্ষ্যে প্রথমেই কবির সরব ঘােষণা: ‘বল বীর বল উন্নত মম শির! নজরুল এই কবিতার প্রথম স্তবকেই প্রসঙ্গত উত্থাপন করেছেন মহাবিশ্ব, মহাকাশ, চন্দ্রসূর্য, গ্রহতারা, ভূলােক দ্যুলােক, খােদার আসন, বিশ্ববিধাত্রী, চির বিস্ময়, রাজটীকা, রুদ্র ভগবান আর দীপ্ত জয়শ্রীর কথা।

বক্তব্যের অনুক্রম অনুযায়ী কবিতাটিকে মােট দশটি স্তবকে ভাগ করা যায়। প্রথম স্তবকে আমি’-র শক্তিমত্তার পাশাপাশি রয়েছে বিজয়ের প্রত্যয় , আর এই বিজয়ের জন্য প্রয়ােজন আঘাতকারীর। আমি’-র ধ্বংসাত্মক রূপ, যা কবিতাটির ১১ থেকে ২৭ পঙক্তি পর্যন্ত ঘূর্ণিত: ‘আমি ঝঞা, আমি ঘূর্ণি। আমি পথ সম্মুখে যাহা পাই যাই চূর্ণি। শক্তির উদ্বোধন ও সংহারচিত্রের পরই হঠাৎ শুরু হলাে মিলনের নৃত্যপাগল ছন্দ। ২৮ থেকে ৩৭ পঙক্তি পর্যন্ত আমি এমন এক মুক্ত জীবনান্দ, যে শত্রুর সাথে গলাগলি করে, আবার মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে। কিন্তু মিলনের এই আকাঙ্ক্ষার পর পরবর্তী দুই পঙক্তিতে ‘আমি’ আবার মহামারী, ভীত, শাসন-ত্রাসন ও সংহার রূপে আবির্ভূত। তারপর ৪২ থেকে ৫১ সংখ্যক পঙক্তিতে আবার আছে উদ্দাম ইতিবাচকতা, হােমশিখা, উপাসনা, নিশাবসানের আকাঙ্ক্ষা। আর এই অংশের ৪৯ তম পঙক্তিতেই আছে সেই জাদুকরী সরল স্বীকারােক্তি:মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী, আর হাতে রণতূর্য

কবিতায় যেসব ঐতিহ্য ও পুরাণের ব্যবহার করা হয়েছেঃ

এই কবিতার ছত্রে ছত্রে পৌরানিক রুপকের ব্যবহার এতােটাই যথার্থ যে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। রূপকের প্রয়ােগ দেখে যে কেউ আঁচ করতে পারবেন, গ্রীক আর ইন্ডিয়ান মিথের ওপর কবির কতােটা দখল ছিল। এই কবিতায় যেসব ঐতিহ্য ও পুরাণের ব্যবহার করা হয়েছে তা ধাপে ধাপে নিম্নে ব্যাখ্যা করা হলাে: ভূলােক মানে পৃথিবী, দ্যুলােক মানে স্বর্গ, আর গােলক মানে বিষ্ণুলােক অথবা স্বর্গে বিষ্ণু বা কৃষ্ণের বাসস্থান। কৃষ্ণ রাধার বৃন্দাবন এখানেই অবস্থিত। ঋগ্বেদে রুদ্র বজ্রের দেবতা, গ্রীক মিথের ‘থর’ এর মতাে ক্ষেপে গেলে বজ্র ছুড়ে মারেন, ইনি ব্রহ্মার পুত্রাতার ক্রোধে নেমে আসে ধ্বংস আর মহামারী। মহাদেব মহাপ্রলয়ের সময় তান্ডব নৃত্য নেচেছিলেন।

গজাসুর ও কালাসুরকে বধ করেও তিনি তান্ডব নৃত্য নেচেছিলেন। এই তান্ডব নৃত্যকলার উদ্ভাবক হিসেবে তাকে নটরাজ ডাকা হয়। পৃথু ছিলেন অত্রি বংশের অত্যাচারী রাজা বেন এর পুত্র। রাজা বেন এর মৃত্যুর পর তার ডান বাহু থেকে পৃথুর জন্ম। প্রজা কল্যানার্থে পৃথু পৃথিবীকে বশ করেন। তার রাজত্বকে বলা হয় পৃথু। চেঙ্গিস খান ছিলেন মঙ্গোলিয়ান সম্রাট এবং দুর্ধর্ষ সমরনায়ক। যুবক চেঙ্গিসের স্ত্রীকে অপহরন করে নিয়ে যায় আরেক গােত্র প্রধান। চেঙ্গিস খান তার নিজ গােত্রকে পুনর্গঠিত করে অপহরনকারী গােত্রকে নৃশংস ভাবে পরাস্ত করে স্ত্রীকে উদ্ধার করেন। এরপর অন্যান্য মােঙ্গল গােত্রদের একীভূত করে অর্ধেক বিশ্ব জয় করেন। ইসলাম ধর্ম মতে কেয়ামত বা মহাপ্রলয় শুরুর আগে হযরত ইসরাফিল (আ:) নামক ফেরেস্তা শৃঙ্গায় ফু দেবেন

সমাজের অসাম্যের বিরুদ্ধে কবির বিদ্রোহী সত্তাঃ

সমাজের অসাম্যের বিরুদ্ধে কবির বিদ্রোহী সত্তা কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিচিত্তে বিদ্রোহী চেতনা প্রকাশ পেয়েছে। তিনি পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে ঘুমন্ত দেশ ও জাতিকে মুক্ত করবার জন্য নিজে যেমন বিদ্রোহ ঘােষণা করেছেন, তেমনি জাতিকে জাগিয়ে তুলতে প্রয়াস পেয়েছেন। কবি জরাজীর্ণ পুরাতন সমাজ ও রীতিনীতি ভেঙ্গে নতুন দেশ ও জাতি গড়তে তার কাব্যে ভাঙনের খেলা খেলেছেন। কবি পরাধীনতার বিরুদ্ধে, অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘােষণা করেছেন। সমকালীন যুগ, তার রাজনৈতিক ঘূর্ণাবর্ত সংশয়, দ্বিধা, অনিশ্চয়তা, অবক্ষয় সুকান্তর কবিসত্তা গড়ে তুলেছে। তার কবিতায় উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিরােধী চেতনা প্রতিফলিত হয়েছে। বিদ্রোহী কবিতায়ও দেখা যায় – সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দ্বারা পদদলিত এদেশ দীর্ঘকাল শাসন, শােষণ, অন্যায়, অবিচার আর বৈষম্যের পঙ্কিলতায় আচ্ছন্ন থেকেছে। সমাজ সচেতন কবি এ সমাজ ও রাষ্ট্রের অবিচার এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে বিপ্লবী মনের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কবিতায় কবির এই বিদ্রোহ ও প্রতিবাদ উচ্চকিত থাকবে যতদিন না তার মূল উৎপাটিত হয়।

বিদ্রোহী কবিতার প্রাসঙ্গিকতাঃ

বর্তমান সময়ে নানা রকম অসাম্যের ভীড়ে আমরা গভীরভাবে উপলব্ধি করি ‘ বিদ্রোহী’ কবিতার প্রাসঙ্গিকতা ও তার অম্লান তাৎপর্যের কথা। উপনিবেশবাদের অবসান ঘটলেও বিশ্বায়নের শৃঙ্খল আর ধনতন্ত্রের শােষণ বঞ্চনা অত্যাচার নির্যাতনসহ আর্থসামাজিক বৈষম্য সবকিছুই বলবৎ আছে। অত্যাচারীর থঙ্গ কৃপাণে’র তলে উৎপীড়িতের ক্রন্দন রােল’ এই বাংলার আকাশে -বাতাসে আজও প্রতিনিয়ত ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয়। অন্যদিকে মানুষের শক্তির প্রতি, তার বীরত্বের প্রতি অনাস্থাও সমানভাবে অটুট। তাই নজরুলের ভাষায়- শান্ত থাকার অবকাশ মিলছে চতুষ্পর্শের প্রতিবাদহীন মেরুদণ্ডহীনতার পরিপ্রেক্ষিতে বিপুল কাম্য হয়ে উঠেছে উন্নত মম শির’- এর বজ্ৰদীপ্ত ঘােষণা। শােষণ পীড়ন আর বৈষম্য থেকে মুক্তির সংকল্প নিয়ে মানুষের আপন শক্তির উদ্বোধন ঘটিয়ে নজরুল কথিত বিদ্রোহের রণে অশ্লীন হওয়ার যেন বিকল্প নেই।

 

 

তোমার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দাও। তাহলে তারাও খুব সহজে পদার্থবিজ্ঞান অ্যাসাইনমেন্ট লিখতে পারবে ।

 

 

 

নোট: প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা। আমরা তোমাদের জন্য উত্তর তৈরি করেছি। আমাদের তৈরিকৃত উত্তর থেকে ধারণা নিয়ে তুমি তোমার অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান তৈরি করতে পারো।

তাছাড়া আমাদের ওয়েবসাইটে Class 6 ) ষষ্ঠ শ্রেণীর অ্যাসাইনমেন্ট , ( Class 7 ) সপ্তম শ্রেণীর অ্যাসাইনমেন্ট ( Class 8 ) অষ্টম শ্রেণীর অ্যাসাইনমেন্ট , (Class 9নবম শ্রেণীর অ্যাসাইনমেন্ট, (SSC ) দশম শ্রেণীর অ্যাসাইনমেন্ট ( HSC ) একাদশ শ্রেণীর অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর দেওয়া হয়ে থাকে আপনারা চাইলে দেখতে পারেন ।


Spread the love

Leave a Comment